” ইতিহাসের স্মৃতি চিহ্নে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন ” – আশরাফুল আলম তাজ
( ধারাবাহিকঃ নয় )
আওয়ামী লীগ তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচির আলোচনায় একটা সরল ও স্পষ্ট অবস্হান গ্রহন করেছিল যে , নীতির ব্যাপারে কোনও আপস না ৷ সংবিধান বিষয়ক আলোচনায় ভুট্রোর জড়িত হওয়ার ব্যাপারে মুজিব ও আওয়ামী লীগের একটা বিশেষ উৎকন্ঠা ছিল ৷ আওয়ামী লীগের সন্দেহ ই বাস্তব হয়ে উঠেছিল ১৯৭১ সালের ১লা মার্চ ৷ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান আকস্মিকভাবে ঘোষণা করেন যে ১৯৭১ সালের ৩রা মার্চ নির্ধারিত অ্যাসেম্বলির অধিবেশন স্হগিত করা হয়েছে ৷ তিনি বিবৃতিতে বলেন, ‘ একটি প্রত্যাশিত ও টেকসই সংবিধানের জন্য, সংবিধান তৈরীতে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান উভয়েরই অংশগ্রহণের যথেষ্ট বোধ থাকার প্রয়োজন রয়েছে ৷ পশ্চিম পাকিস্তানের সংখ্যাগুরু দল ৩রা মার্চে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির অধিবেশনে যোগ না দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ৷ তাছাড়া ভারত-সৃষ্ট সাধারণ উত্তেজনাকর অবস্হা এই গোটা পরিস্হিতিকে আরও জটিল করে তুলছে ৷ অতঃপর আমি ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি স্হগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি যা পরবর্তী কোনও তারিখে অনুষ্ঠিত হবে ৷’ এই ঘোষণায় ভুট্রো – ইয়াহিয়ার ষড়যন্ত্রের খেলা বাঙলীর কাছে আরও অধিক স্পষ্ট হয়ে উঠল ৷
ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির আরম্ভ হওয়ার দুদিন আগে তা স্হগিত করার খবরে বিমূর হয়ে পড়েন ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির সব সদস্য , পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের আকাঙ্খা বিস্ফুরিত হয়ে জ্বলে ওঠে ৷ এই খবরে পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে দেখা দেয় গণঅভ্যুথান , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীন বংলার পতাকা ওড়ায় ছাত্ররা ৷
ব্যাপক প্রতিবাধ ছড়িয়ে পড়ে পূর্ব পাকিস্তানের সর্বত্র ৷ জাতীয় সরকার এবং সরকারি সব প্রতিষ্ঠান ও কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বেসামরিক অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দেন শেখ মুজিব ৷ মূল উদ্দেশ্য ছিল ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি আহবানের চাপ সৃষ্টি করা ৷ শেখ মুজিবের অসহযোগিতার আহবানের পর পরই , পশ্চিম পাকিস্তান সরকারের সমর্থক বলে অনুভূত জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতিশোধের অভিযান শুরু হয়ে গিয়েছিল পূর্ব পাকিস্তানে ৷ সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যেমন বিহারী হত্যাকান্ড, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি ভয়ানক সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে পূর্ব পাকিস্তানে ৷ ( ক্রমশ )
Leave a Reply