
একই ব্যক্তির ভিন্ন জেলায় অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া- কাইয়ুম সরকার
এক ব্যক্তি তিনটি ভিন্ন জেলায় তিনটি ভিন্ন অপরাধ করেছে:
চট্টগ্রাম জেলা → চুরি (Section 379 of Penal Code)
ঢাকা জেলা → খুন/হত্যা (Section 302 of Penal Code)
ফরিদপুর জেলা → ডাকাতি (Section 395/396 of Penal Code)
এখন সে ধরা পড়েছে ঢাকা পুলিশের হাতে।
⚖️১. কোন জেলায় বিচার হবে?
মূল নীতি:
বাংলাদেশের ফৌজদারি কার্যবিধি (CrPC), ধারা 177 অনুযায়ী:
“যে অপরাধ যে স্থানে সংঘটিত হয়েছে, সাধারণত সেই স্থানের আদালতেই তার বিচার হবে।”
অর্থাৎ:
ঢাকায় খুনের বিচার হবে ঢাকার অধিক্ষেত্রের (jurisdiction) আদালতে,
চট্টগ্রামের চুরির বিচার হবে চট্টগ্রামের আদালতে,
ফরিদপুরের ডাকাতির বিচার হবে ফরিদপুরের আদালতে।
২. যেহেতু সে ঢাকা পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে — এখন কী হবে?
তাকে প্রথমে ঢাকা মহানগর পুলিশের মাধ্যমে আদালতে হাজির করা হবে।
আদালত রিমান্ড বা হেফাজতের নির্দেশ দিতে পারে, এবং
তদন্ত শেষে যদি খুনের মামলা আগে সম্পূর্ণ হয়, তবে ঢাকা জেলা আদালতেই খুন মামলার বিচার শুরু হবে।
৩. বাকি দুই জেলার মামলা (চট্টগ্রাম ও ফরিদপুর) কী হবে?
দুটি সম্ভাবনা আছে:
(ক) প্রত্যেক জেলায় আলাদা মামলা চলবে
প্রত্যেক অপরাধের জন্য পৃথক FIR ও পৃথক তদন্ত হবে সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ কর্তৃক।
চট্টগ্রামে চুরির মামলা → চট্টগ্রাম আদালত
ফরিদপুরে ডাকাতির মামলা → ফরিদপুর আদালত
ঢাকায় খুনের মামলা → ঢাকা আদালত
বিচার শেষে তিনটি মামলার জন্য তিনটি পৃথক রায় ও সাজা হতে পারে।
(খ) CrPC ধারা 219–223 অনুযায়ী একত্র বিচার (Joint Trial)
যদি আদালত মনে করে সব অপরাধ একই ব্যক্তির দ্বারা, পরপর বা একই উদ্দেশ্যে সংঘটিত হয়েছে, তবে
উচ্চতর আদালতের অনুমতি নিয়ে একত্রে বিচার করা যেতে পারে, তবে সাধারণত গুরুতর অপরাধের জেলা (যেমন খুন) যেখানে হয়েছে, সেখানেই বিচার হয়।
তবে এটি বিরল — সাধারণত পৃথক মামলাতেই বিচার চলে।
৪. যদি তার খুনের অপরাধ প্রমাণিত হয়?
যদি ঢাকায় খুনের অপরাধ প্রমাণিত হয়:
সে আদালতের রায় অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পেতে পারে।
এরপর অন্য দুটি জেলার মামলার শুনানি চলতে পারে (যদি এখনো নিষ্পত্তি না হয়)।
তবে,
যদি খুন মামলায় সে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হয়, তখন অন্যান্য মামলার রায় প্রক্রিয়াগতভাবে স্থগিত রাখা হতে পারে বা দণ্ড একত্রে কার্যকর করা যেতে পারে।
৬. সার্বিক বিচার প্রক্রিয়া:
ঢাকায় গ্রেপ্তার → পুলিশ তদন্ত → চার্জশিট
ঢাকা আদালতে খুন মামলার বিচার
চট্টগ্রাম ও ফরিদপুর পুলিশের কাছে হস্তান্তর/তথ্য প্রেরণ
⚖️দণ্ড কার্যকর হবে সরকারের অনুমোদন ও আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী Barendra Kumar Ghose v. King Emperor, AIR 1925 PC 1 — এখানে দণ্ডবিধির সেকশন 34 (common intention) বিষয় আলোচনা হয়েছে।
এই রায়ে বলা হয়েছে:
“When several persons take part in the execution of a criminal act in furtherance of a common intention, each is to be held liable as if he had done it alone.”
⚖️Bazlur Huda v. State (62 DLR (AD) 1) — এখানে বিচারপতি উল্লেখ করেছেন: When specific acts done by each of the accused persons have been established showing their common intention they are admissible against each and every other accused
একজন ব্যক্তি একাধিক জেলায় অপরাধ করলে,
প্রত্যেক অপরাধের বিচার সেই জেলার আদালতেই হবে,
যেখানে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।
তবে যদি কোনো অপরাধ গুরুতর হয় (যেমন খুন),
সেই অপরাধের মামলা আগে নিষ্পত্তি হয়।
অন্য অপরাধের বিচার পরে চলতে পারে বা একত্রিতও হতে পারে।
লেখক : কাইয়ুম সরকার (University of Essex) (Queen mary University -PIL)
উক্ত আর্টিকেলটি লিখতে সহযোগিতা করেছেন
Adv Mohammad Emam
Md Rasel Mahmud
Shrabonty Dey
Leave a Reply