” ইতিহাসের স্মৃতি চিহ্নে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন ” – আশরাফুল আলম তাজ
( ধারাবাহিকঃ বার )
এদিকে ৭ই মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব অসহযোগ আন্দোলনের নতুন কর্মসূচী ঘোষণা করেন এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সে সকল কর্মসূচি পালন করার জন্য জনগণের প্রতি আহবান জানান ৷ অসহযোগ আন্দোলনে ঢাকার সরকারি, আধাসরকারি প্রতিষ্ঠান , ব্যাংক-বীমাসহ সকল প্রতিষ্ঠান শেখ মুজিবের নির্দেশে পরিচালিত হতে থাকে এই অসহযোগ আন্দোলন ক্রমশই স্বাধীনতা আন্দোলনে রূপ নেয় ৷ তাতে অধিকাংশ রাজনৈতিক নেতা ও সংগঠন শেখ মুজিবের কর্মসুচির প্রতি সংহতি প্রকাশ করতে থাকে ৷ ৯ই মার্চ মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত সর্বদলীয় এক জনসভায় বাঙলা জাতীয় লীগের প্রধান আতাউর রহমান খান, অলি আহাদসহ অনেক নেতৃবৃন্দ শেখ মুজিবের নেতৃত্বে পরিচালিত আন্দোলনের প্রতি অকুন্ঠ সমর্থন জানান ৷ সে সূত্র ধরে ১০ই মার্চ সরকারি পত্রিকা ‘ দৈনিক পাকিস্তান ‘ ‘ মুজিব-ভাসানী এক হবে ‘ শিরোনামে এক সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে৷ ঐক্যবদ্য আন্দোলনের জন্য এই প্রতিবেদনটি গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল ৷ এমন পরিস্হিতিতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান রাজনৈতিক কোন পদক্ষেপ না নিয়ে সামরিক শক্তি প্রয়োগ করতে লে. জে. সাহেবজাদা ইয়াকুব খানকে অপসারণ করে লে. জেনারেৱ টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেন ৷ উল্লেখ্য যে জেনারেল টিক্কা খান কঠোর সেনা শাসক হিসেবে পূর্ব থেকেই বিতর্কিত ছিলেন ৷ ততকালিন ঢাকার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এ. বি. সিদ্দিকীসহ সকল বিচারপ্রতি জেনারেল টিক্কা খানকে গভর্ণর হিসেবে শপথ পাঠ করাতে অস্বীকৃতি জানান ৷ ফলে তাকে শুধু সামরিক শাসকর্তা হিসেবেই দায়িত্ব পালন করতে হয়েছিল ৷ এখানে উল্লেখ্য যে পরবর্তীতে ২৫শে মার্চ বিচারপতি সিদ্দিকীর নিকট শপথ নিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের দায়িত্ব গ্রহন করে ছিলেন ৷ একই সঙ্গে জেনারেল টিক্কা খান পাকিস্তানের ‘ খ ‘ ইউনিট তথা পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক আইন প্রশাসক নিযুক্ত হন ৷
রাজনীতির এ রূপ টাল-মাটাল অবস্হায় ১৫ই মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সামরিক বাহিনীর পদস্হ কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে ঢাকায় আসেন ৷ রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানকল্পে প্রেসিডেন্টের এই আগমন সরকারি সূত্রে প্রচার করা হলেও আসলে এর মূল উদ্দেশ্য ছিল পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক অভিযান পরিচালনার পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহনের এক চক্রান্ত ৷
ইয়াহিয়া ঢাকায় আসলে এই দিনই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব অত্যান্ত জ্বালাময় ও উস্কানিমূলক বিবৃতি দিয়ে ছিলেন , ” জনগণের বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে… বাংলাদেশের জনগণ, সিভিল সার্ভেন্ট, অফিসকর্মী ও কারখানার শ্রমিক , কৃষক, ছাত্র প্রত্যেকেই দেখিয়েছে যে আত্নসমর্পণের চেয়ে তারা বরং মৃত্যুবরণ করবে… … বাংলাদেশের স্বাধীনতার তেজ নির্বাপিত করা যাবে না… … অত:পর যতদিন আমাদের মুক্তির লক্ষ্য পূরণ না হবে , সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে নতুন ওজস্বিতায় ৷ ” ( ক্রমশ )
( আশরাফুল আলম তাজ )
Leave a Reply