” ইতিহাসের স্মৃতি চিহ্নে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন” – আশরাফুল আলম তাজ
( ধারাবাহিকঃ চৌদ্দ )
ঢাকায় যখন রাজনৈতিক আলোচনার কোনও অগ্রগতিই হচ্ছিল না ৷ ১৮ই মার্চ করাচি থেকে ভুট্টো জানিয়ে দিলেন আলোচনার কোন ফল হবে না ৷ এমন পরিস্হিতিতে জনমনে উদ্বেগ ক্রমশ বেড়েই চলছিল ৷ সবার মনে তখন প্রশ্ন একই…… কী ঘটছে? কী হতে চলেছে? এরই মধ্যে খন্ড খন্ড জন মিছিল শেখ মুজিবের ৩২ নম্বর ধানমণ্ডিস্হ বাসভবনে এসে বঙ্গবন্ধুর ডাকা অসহযোগ আন্দোলনের প্রতি পুরো সমর্থন জানাতে থাকল ৷ পূর্ব পাকিস্তানে তখন শেখ মুজিব তথা আওয়ামী লীগের নির্দেশে পরিচালিত হতে লাগল ৷ পাকিস্তান সরকারের সকল কার্যক্রম জনগণ কর্তৃক অবজ্ঞার সাথে প্রত্যাখ্যাত হচ্ছিল ৷ কার্যত অচল হয়ে পড়ল পূর্ব পাকিস্তান ৷ আওয়ামী লীগের দেওয়া নির্দেশাবলীই তখন দেশের সর্বোচ্চ আইনে পরিণত হল ৷
এদিকে সাপ্তাহিক স্বরাজ জনতার আন্দোলনকে
‘ সিপাহি বিদ্রোহ ‘ আখ্যা দিয়ে এক দুঃসাহসী প্রতিবেদন প্রকাশ করে ৷ এখানে উল্লেখ্য, ইয়াহিয়ার সরকার ধারণা করতে পেরেছিল যে বাঙালিদের প্রতিরোধ যুদ্ধের প্রথম শক্তির উৎস পুলিশ বাহিনী ও ইপিআর ৷ এ সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একটি ব্যাটালিয়ন জয়দেবপুরের রাজবাড়ীতে অবস্হান করছিল ৷ বাঙালি অফিসার এবং সৈনিকের সমন্বয়ে গঠিত এ ব্যাটালিয়নটিকে নিরস্ত্র করার জন্য ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের এক পাঞ্জাবি ব্রিগেডিয়ারের নেতৃত্বে একদল সৈন্য জয়দেবপুরে প্রেরণ করা হয় ৷ ঘটনার সূত্রপাত ১৯ই মার্চ ৷ খবর ছড়িয়ে পড়ে যে, ভারি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত অবাঙালি অফিসার ও সৈন্যের একটি দল ঢাকা থেকে জয়দেবপুরে পাঠানো হয়েছে ৷ তারা রাজবাড়ীতে ২ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে নিরস্ত্র করার পাশাপাশি জয়দেবপুর থেকে ৫ মাইল উত্তরে গাজীপুর অর্ডনান্স ফ্যাক্টরি দখল করে নিতে যাচ্ছে ৷ এমন বিস্ফোরণোন্মুখ রাজনৈতিক পরিস্হিতিতে জনমনে উত্তেজনার পারদ ক্রমশই উর্ধ্বমুখি হয়ে ওঠে ৷ দ্রোহের স্ফুলিঙ্গ বিস্ফুরিত হয় জনমনে ৷ পাকিস্তানি সৈন্যরা যাতে গাজীপুর অর্ডনান্স ফ্যাক্টরি দখল নিতে এবং ২ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি সৈন্যদের নিরস্ত্র না করতে পারে সে জন্যে ঢাকার উপকন্ঠ থেকে জয়দেবপুর ও রাজবাড়ী পর্যন্ত রাস্তার বিভিন্ন স্হানে প্রতিরোধ ব্যারিকেড স্হাপন করে তুলে সংগ্রামী জনতা ৷
এমন অশান্ত-অস্হির পরিস্হিতিতে ১৯ মার্চ, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকার ৫৭ ব্রিগেডের কমান্ডার, ব্রিগেডিয়ার জাহানজেব আরবাবকে গাজীপুর ও রাজবাড়ীর উদ্দেশ্যে পাঠানো হয় ৷ তার সাথে সশস্ত্র ৫ জন অফিসার ও ৭.৬২ মি.মি. এলএমজিসহ ৭০ জন সৈন্য ৷ জয়দেবপুরের পথে ঢাকার ১০ মাইল উত্তরে টঙ্গীতে তারা প্রথম ব্যরিকেডের সন্মুখীন হন ৷ ( ক্রমশ )
আশরাফুল আলম তাজ
Leave a Reply