( ধারাবাহিকঃ তের )
১৬ই মার্চ বেলা ১১টায় শেখ মুজিবুর রহমান ইয়াহিয়ার সাথে বৈঠক করার জন্য প্রেসিডেন্ট হাউজে( বঙ্গভবন) যান ৷ উল্লেখ্য যে রাজনৈতিক সংকট নিরসনের জন্য এই ১৬ই মার্চ প্রেসিডেন্টের সাথে শেখ মুজিবুর রহমানের বহুল আলোচিত প্রথম বৈঠক ৷ বৈঠকে ়যাওয়ার সময় শেখ মুজিব তার গাড়ীতে আন্দোলনে নিহত দের জন্য শোকের কাল পতাকা আর বাংলাদেশের প্রতীক ধারণ করেছিলেন ৷ বৈঠকে শেখ মুজিব অবিলম্বে সামরিক আইন প্রত্যাহার ও ক্ষমতা হস্তান্তর সংক্রান্ত ৪ দফার দাবী তুলে ধরেন ৷ এদিকে ১৫ই মার্চ পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম সারির ৪টি দৈনিক পত্রিকা, দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক আজাদ, দৈনিক পাকিস্তান অবজারভার এবং দৈনিক সংবাদ এক যৌথ সম্পাদকীয়তে ” আর সময় নাই ” শীর্ষক সম্পাদকীয় প্রকাশ করেন ৷ৃ
৪টি পত্রিকায় অভিন্ন সম্পাদকীয় নিবন্ধে সাংবিধানিক ভাবে সংকট নিরসনের জন্য নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের জোর দাবী জানান ৷ ১৬ই মার্চ কড়া সামরিক প্রহরায় বঙ্গবন্ধু ও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার এই বৈঠক নিয়ে সর্বস্তরের জনতার মধ্যে উদ্বিগ্ন, ও উৎকন্ঠা বিরাজ করছিল ৷
১৭ই মার্চ মুজিব-ইয়াহিয়ার বৈঠকের প্রতিবেদন দিতে গিয়ে দৈনিক দি পিপল লিখে… Mujib -Yahya meeting to decide whether pakistan to stay or go: Indepdence of Bangladesh at Fait Accompli. এই দৈনিক টিতে আরো লিখা হয়… প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া, শেখ মুজিবের দেওয়া শর্তগুলো মেনে না নিলে পরিণামে বাঙালি স্বাধীনতা ঘোষণা করবে ৷ এদিকে শেখ মুজিব তাঁর কালো কোট ( মুজিব কোট) পরিহিত অবস্হায় তাঁর ঢাকার ৩২ নম্বর ধানমন্ডিস্হ বাসভবনে দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের ব্রিফিং দেন যা পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে দেশে-বিদেশে ছ়ড়িয়ে পড়ে ৷ পাশাপাশি সংবাদপত্রগুলো দেশব্যাপী অসহযোগ আন্দোলনের খবর, রাজনৈতিক ভাষা ও সম্পাদকীয় প্রকাশ করে জনমতকে স্বাধীনতার আন্দোলনের দিকে উজ্জীবিত করে ৷
দৈনিক পত্রিকাগুলো যখন শেখ মুজিবের দেওয়া ৪টি শর্তের উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করে এবং ৪টি শর্ত মেনে সমাধানের পথ বের করার নির্দেশনা দিচ্ছে ঠিক তখনই কতিপয় সাপ্তাহিক পত্রিকা ও দৈনিক দি পিপল সরাসরি স্বাধীনতার ডাক দেওয়ার জন্য রাজনৈতিক নেতৃ
বৃন্দের প্রতি আহবান জানান ৷
একদিকে পূর্ব-পাকিস্তানে জুড়ে, ” বীর বাঙালি অস্র ধর- বাংলাদেশ স্বাধীন কর ‘ এরূপ বৈপ্লবিক স্লোগানে স্লোগানে উদ্দীপিত করতে থাকে বাঙালিকে ৷ অপরদিকে রাজনৈতিক ভাবে সমস্যা সমাধান করতে পাকিস্তানি সামরিক শাসক পক্ষের অনাগ্রহের কারণে সর্বাত্নক সশস্র সংগ্রাম অত্যাসন্ন হয়ে ওঠল ৷ ১৭ই মার্চ শেখ শেখ মুজিবের সঙ্গে ইয়াহিয়ার আর এক দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হল ৷ প্রায় এক ঘন্টা ব্যাপী স্হায়ী বৈঠকে কোন অগ্রগতি হয় নি ৷ জনগণ ইয়াহিয়াকে আর বিশ্বাস করতে পারছিল না ৷ জনমনে একটা ধারণা বদ্বমূল হয়ে ওঠেছিল যে , ভুট্রোর যোগসাজশে পশ্চিম পাকিস্তানে বসে সামরিক জান্তারা এক গণ হত্যার পরিকল্পণা করছে ৷ একদিকে ঢাকায় আলোচনা চলছিল অপরদিকে করচিতে বসে ভুট্রো উসকানিমূলক বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছিল ৷
সরকার ও আওয়ামী লীগের মধ্যে উত্তেজনা হ্রাস করতে উদগ্রীব ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সালের ১৯শে মার্চ শেখ মুজিবের সঙ্গে তাৎক্ষণিক ভাবে আরও এক বৈঠক আহবান করেন ৷ ( ক্রমশ)
Leave a Reply