‘ ইতিহাসের স্মৃতি চিহ্নে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন – আশরাফুল আলম তাজ
( ধারাবাহিকঃ এগার )
১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ঢাকার রমনা রেসকোর্সে এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৷ যে ভাষণটি বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক ভাষণ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে ৷ যে ভাষণটি পরবর্তী সময়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে, মুসলিম- হিন্দু নির্বিশেষে সমগ্র বাঙালী জাতিকে মুক্তির সংগ্রামের বীজমন্ত্র হয়ে ঝাপিয়ে পড়তে উদ্বোদ্ধ করে ছিল ৷ যে ভাষণটি এখনও বিশ্বের শোষিত- বঞ্চিত ও মুক্তিকামী মানুষকে প্রেরণা যুগিয়ে থাকে ৷ তিনি এই ভাষণটি ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ঢাকার রমনায় অবস্হিত রেসকোর্স ময়দান বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিকাল ২টা ৪৫ মিনিট থেকে বিকাল ৩ টা ৩ মিনিট শেষ করেন ৷ ১৮ মিনিট স্হিতির এই ভাষণটি বিশ্বের ১৩টি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে ৷ এই অসাধারণ ভাষণের জন্য বিশ্বের আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় বঙ্গব্ন্ধু শেখ মুজিবকে রাজনীতির কবি হিসেবে উল্লেখ করেন ৷ ২০১৭ সালের ৩০ শে অক্টোবর ইউনেস্কো এই ভাষণকেে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণ ও ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে স্বীকৃতি দেন ৷ ২০২০ সালে এই ভাষণের দিনটিকে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন বাংলাদেশ সরকার এবং এই দিনটি কে ‘রাষ্ট্রীয় মর্যদা’ পালন করে আসছিল কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ১৬ ই অক্টোবর বাংলাদেশের অন্তর্বতী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ দিবসটি বাতিল করেছেন ৷ পৃথিবীর ইতিহাসে যতগুলে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ রয়েছে এর মধ্যে অন্যতম একটি হল ৭ই মার্চের ভাষণ ৷ ৭ই মার্চের ভাষণে প্রতিটা শব্দ, প্রতিটা বাক্য, অনুপ্রেরণা দেয় এবং অনুরিত করে ৷ সন্দেহ নেই এই ভাষণটি শুধু বাংলাগেশের মানুষকেই নয়, বিশ্বের স্বাধীনতাকামী সকল মানুষের জন্যই এক অভিনব প্রেরণার উৎস হয়ে যুগ যুগ টিকে থাকবে ৷
ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত হওয়ার চরম মুল্য দিয়ে দ্বিখন্ডিত হওয়া পাকিস্তান , জন্মের ২৩ বছরের মধ্যেই মূল ভূখন্ড থেকে পৃথক হল আর একটি প্রদেশ ৷ এর একমাত্র কারণ, পূর্ব বঙ্গের জনসাধারণের ওপর পাকিস্তানি শাসকদের স্বৈরাচারী নীতি এবং কার্যকলাপ ৷ পূর্ববঙ্গের আন্দোলন ছিল পাকিস্তানের স্বৈরাচারী নীতি, একনায়কতন্ত্র এবং শোষণের বিরুদ্ধে ৷ ক্রমাগত গ্রাস করা একটি জনগোষ্ঠীর ভাষা, কৃষ্টি এবং সংস্কৃতিকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজন সৎ এবং দৃঢ়চেতা কোনও নেতা , যাঁর প্রতি জনগণ পূর্ণ আস্হা রাখতে পারবেন ৷ আদর্শ এবং সঠিক নীতিই পারে শক্তিশালী জাতি তৈরি করতে ৷ পৃথক বাংলাদেশ গঠনের সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যে মুক্তিকামী মানুষ খুঁজে পেয়েছিলেন তাদের আন্দোলনের আ়ড়ালে এক স্বপ্নের বাংলাদেশ ৷ বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব হতা না যদি বাংলাদেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুর মত এমন মহান একজন রাষ্ট্রনায়ককে না পেতেন ৷ এ কথা অনস্বীকার্য যে বাঙালির বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গত শতকের দক্ষিণ এশিয়া ভূখন্ডের অন্যতম নেতা, ও রাষ্ট্রনায়ক ৷ বঙ্গবন্ধুর মধ্যে মিশে আছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা অর্জনকে ঘিরে থাকা স্বপ্ন – সাধনা – সংগ্রামের মর্মস্পর্শী কাহিনী ৷
১০ লাখেরও বেশি জনতা সেখানে উপস্হিত ছিলেন ৷ ভাষণের চোম্বক অংশ ছিল ,
” এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম ; এবারে সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম ৷ জয় বাংলা ! রক্ত যখন আমরা দিয়েছি, তখন আমরা আরও রক্ত দেব, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ… …… প্রতিটা বাড়িকে দূর্গে পরিণত কর তোমাদের যাকিছু আছে তাই নিয়ে শক্রুর মোকাবেলা কর ৷’ শেখ মুজিব ৭ই মার্চে স্বাধীনতা ঘোষণা করেননি, কিন্তু ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি অধিবেশনে অংশ গ্রহনের আগে ৪টি শর্ত দিয়েছিলেন: (১) অবিলম্বে সামরিক আইন প্রত্যাহার ৷ (২) সেনাবাহিনীর ব্যারাকে প্রত্যাবর্তন ৷
,(৩) সেনাবাহিনীর অভিযানে প্রাণহানির বিচারবিভাগীয় তদন্ত এবং (৪) অ্যসেম্বলি বসার আগে বা সংবিধান প্রণয়নের আগে তাৎক্ষণিক ক্ষমতা হস্তান্তর ৷ শেখ মুজিবের দাবীর জবাবে ভুট্রো ঘোষণা করেন, ‘ শেখ মুজিবুর রহমানের দাবি অনুযায়ী সংবিধান নিষ্পত্তির আগেই যদি জনগণের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হয়, তাহলে তা করতে হবে পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের কাছে এবং পশ্চিম পাকিস্তানের দলের কাছে ৷’ ১৯৭১ সালের ১০ই মার্চ ভুট্রো একটি টেলিগ্রাম পাঠান বঙ্গবন্ধুকে, তাতে বলা হয়েছিল, পাকিস্তানকে যে কোনও মুল্যে রক্ষা করতে হবে ৷ আমি সংকট নিরসনে একটা অভিন্ন সমাধান খুঁজে বের করতে ঢাকায় আসতে ইচ্ছুক, যাতে সংবিধান প্রণয়ন নিয়ে অ্যাসেম্বলি অগ্রসর হতে পারে ৷ ‘ পূর্ব পাকিস্তানের চলমান অনাস্হার কারণে ভুট্রোর এই প্রস্তাব কে গুরুত্ব দেন নি শেখ মুজিব ৷ ( ক্রমশ)
Leave a Reply