‘ ইতিহাসের স্মৃতি চিহ্নে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন ‘ – আশরাফুল আলম তাজ
( ধারাবাহিকঃ দশ )
অ্যাসেম্বলি অধিবেশনের স্হগিত হওয়ার খবর শুনে ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের কনসাল জেনারেল আর্চার ব্লাড পরিস্হিতি স্ব-চোখে উপভোগ করতে আদমজী
কোর্ট ভবনের ছাদে ওঠে দেখছিলেন ৷ তার অভিজ্ঞতালব্দ সেই ক্রান্তিকালের, বাঙালীর জাগরণের উন্মোদনার বর্ণনা যেন এক জীবন্ত দলিল ……
” আমরা দেখতে পাচ্ছিলাম ওই এলাকার সমস্ত অফিস বিল্ডিং থেকে স্রোতের মত বেরিয়ে আসছে বাঙালিরা ৷ তারা ভিমরুলের মত ক্রুদ্ধ ৷ তাদের গণতান্ত্রিক বিজয় ছিনিয়ে নেওয়ায় তারা হতাশ ও উত্তেজিত ছিল ৷ মানুষের ভি়ড় শান্তিপূর্ণ থাকলেও কিছু লোকের হাতে ছিল মুগুর বা লাঠি ৷ যা উপমহাদেশের পছন্দের হাতিয়ার ৷ ” তিনি যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমোন্টকে বলে ছিলেন, ” আমি পাকিস্তানের সম্পর্ক ভাঙার সূচনা দেখেছি ৷” যাহোক মূহর্ত্তেই বেসামরিক অসহযোগের বিশাল প্রবাহ ছ়ড়িয়ে পড়ল, সেই সঙ্গে রাস্তায় বিক্ষুব্দ জনতার ভিড় আর পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বেশ কিছু সংঘর্ষে উত্তাল হয়ে উঠল পরিস্হিতি ৷ পরের দিন বাঙলিরা সাধারণ ধর্মঘট পালন করে এবং শেখ মুজিবের আহবানে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাভাবিক জীবন থেমে অচল হয়ো পড়ে ৷ বাঙালি তরুণ- যুবকরা সমস্ত শহরে মিছিল করে স্লোগান দেয়, ” জয় বাংলা ৷ ” পূর্ব পাকিস্তানের লোকজন সেনাবাহিনীদের প্রতি চডাও হয়ে ওঠেছিল ৷ অনেক স্হানে থুথু নিক্ষেপ ও ধাক্কা- ঠেলা মেরে সেনাদেরকে নাজেহাল করেছিল বেশামাল জনতা ৷ এ হেন বিদ্রুপ পরিস্হিতিতেও সেনা বাহিনীর সংযম প্রদর্শন ও আচরণ ছিল চমৎকার ৷
১৯৭১ সালের ৩রা মার্চ থেকে ২৫শে মার্চের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানে কেন্দ্রীয় সরকারের বিধান অচল হয়ে গিয়েছিল ৷ ৬ই মার্চ সমান্তরাল প্রশাসন প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন আওয়ামী লীগ ৷ অপর দিকে ৬ই মার্চ ইয়াহিয়া জাতির উদ্দেশ্যে ক্ষুব্দ ভাষন দেন ৷ ‘ বিশৃংঙ্খলা, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ ও হত্যার অভিযোগ করেন তিনি ৷ অ্যাসেম্বলির অধিবেশন স্হগিত করায় ১লা মার্চ থেকেই বিস্ফোরক পরিস্হিতি সৃষ্টি হয়েছিল ৷ ফলে কেন্দ্রীয় সরকারের অসহায়ত্ব স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল ৷ আর কোনও উপায় না পেয়ে ৬ই মার্চ ইয়াহিয়া সিদ্বান্ত নেন , ২৫শে মার্চ ঢাকায় অ্যাসেম্বলির অধিবেশন বসবে কোনও শর্ত ছা়ড়াই ৷ তবে ইয়াহিয়া ভাষণে রাজনৈতিক অচলবস্হায় আটকে রেখে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিকদের হুমকি দিয়েছিলেন ৷ তিনি বলেছিলেন, ,’ পাকিস্তানের অখন্ডতা, সংহতি আর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব পাকিস্তান সশস্র্র বাহিনীর, এূবং এতে তারা কখনও ব্যর্থ হয়নি ৷ ‘ ইয়াহিয়া ধারণা করেছিলেন, ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির আহবান করার একটা তারিখ ঘোষণা দিলে পূর্ব পাকিস্তানের আইনশৃঙ্খলা পরিস্হিতির উন্নতি হবে এবং দাঙ্গা, লুটত্বরাজ, অগ্নিসংযোগ, হত্যাকাণ্ড ইত্যাদি বন্ধ হবে ৷ কিন্তু না, আন্দোলন তীব্র গতিতে চলতেই থাকে ৷ ( ক্রমশ)
Leave a Reply