‘ ইতিহাসের স্মৃতি চিহ্নে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন – আশরাফুল আলম তাজ
( ধারাবাহিকঃ আট)
ইতোমধ্যে, ভুট্রোর ক্ষমতা ভাগাভাগির দাবি অবিরাম প্রত্যাথান করেই চলেছিলেন মুজিব ও তার দল আওয়ামী লীগ ৷ একই সঙ্গে সরকার গঠনের ন্যায়সঙ্গত দাবির নীতিগত বাস্তবায়নে অনড় থাকেন শেখ মুজিব ৷ মুজিব সচেতন ছিলেন যে ইয়াহিয়া খানের সরকারের সামনের দিকে অগ্রসর হওয়ার পথ একটাই আর তা হল ন্যায়সঙ্গতভাবে আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা ৷ মুজিব ইয়াহিয়া ও তার সরকারকে জানিয়েছিলেন, ভুট্রোর অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা সত্ত্বেও তিনি বাস্তমসম্মত রাজনৈতিক মিমাংসার জন্য প্রস্তুত আছেন ৷ ১৯৭১ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি সংবাদমাধ্যমে বিবৃতিতে মুজিব বলেন , তিনি ইয়াহিয়া খান ও পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনায় বসতে ইচ্ছুক, যাতে করে জটিলতায় আচ্ছাদিত হওয়া রাজনৈতিক সমস্যাগুলোর নিরসন হয়, যা বর্তমানকে উস্কানি দিচ্ছে ৷ মুজিব আওয়ামী লীগের সদস্যদের আশ্বস্ত করেছিলেন যে, কোনও ভাবেই ছয় দফার সমন্বয় করা হবে না ‘ — আওয়ামী লীগের মূল রাজনৈতিক অবস্হান ও নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে ‘ প্রয়োজনীয় যেকোনও কৌশল’ প্রয়োগের প্রতিশ্রুতি দেন শেখ মুজিব ৷ পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে কর্মকাণ্ডে মুজিব তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও বেধা বাঙালির স্বার্থে নিবেদন করে মুজিব প্রমাণ করেছেন যে তিনি বাঙালির স্বার্থে নিবেদিত এবং পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে দেওয়া তার ওয়াদা ও নির্বাচনী ইশতেহার পূরণ করতে যেকোনও মূল্য দিতে প্রস্তুত ৷
১৯৭১ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের সংসদীয় দল আওয়ামী লীগের ছয় দৰা সম্বলিত খসড়া সংবিধান অনুমোদন করে ৷ মুজিব আশ্বাস দেন যে, ছয় দফা পশ্চিম পাকিস্তানের ওপর আরোপ করা হবে না , যার অর্থ পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য পৃথক আর একটা সংবিধান হবে ৷ তাতে ভুট্রোর জবাব ছিল, পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য দুটো পৃথক সংবিধান হবে খামখেয়াল, হাস্যকর ৷ তাছাড়া সংকট সমাধানের পরামর্শ দিয়ে অ্যাসেম্বলির অধিবেশন স্হগিত করার কিংম্বা সংবিধান প্রণয়নের জন্য ইয়াহিয়া খানের ‘ এলএফওতে’ নির্ধারণকৃত ১২০ দিনের সীমা অপসারণ করার আভাস দেন ভুট্রো ৷ তাছাড়াও ছয় দফার ব্যাপারে তিনি নিজের মতানৈক্য থেকে কিছুটা নমোনীয়তা এনে বলেন, বৈদেশিক বাণিজ্য ও বৈদেশিক ত্রাণের ভার প্রাদেশিক সরকারের ওপর ন্যস্ত করা যাবে না ৷ ( ক্রমশ)
Leave a Reply