‘ইতিহাসের স্মৃতি চিহ্নে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন’…… আশরাফুল আলম তাজ
(ধারাবাহিকঃ ছয়)
১৯৭১ সালের জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে পিপিপির একটি প্রতিনিধি দলকে নেতৃত্ব দিয়ে ঢাকায় আসেন ভট্রো , ক্ষমতা ভাগাভাগির ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনা করার উদ্দেশ্যে ৷ ছয় দফার ভিত্তিতে পাকিস্তানের জন্য একটা নতুন (সংশোধিত) সংবিধান প্রণয়নে অনড়় ছিলেন মুজিব ও আওয়ামী লীগ , যে ছয় দফার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন ছিলেন ইয়াহিয়া, ভুট্রো ও পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনীতিকরা, কেননা তারা পাকিস্তানের এক আলাদা ভবিষ্যৎ কল্পনা করেছিলেন ৷ পূর্ব পাকিস্তানে সাধারণভাবে ধারণা ছিল যে মুজিবুর রহমানকে জাতীয় সরকার গঠন করতে দেবে না ইয়াহিয়ার সরকার ও ভুট্রো, এবং পাকিস্তানের জনগণের আকাঙ্খা অনুযায়ী ছয় দফা ভিত্তিক নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতেও দেবে না৷
১৯৭১ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিব সংখ্যাগুরুর রায় মেনে নেয়ার আহবান জানান ইয়াহিয়ার প্রতি এবং হুমকি দিয়ে বলেন, ‘ ১৯৬৮- ১৯৬৯ সালে যখন আমরা কারাগারে ছিলাম, শ্রমিক ও কৃষকরা আইয়ুব সরকারের পতন ঘটিয়েছিল ৷ এখন আমরা যেহেতু কারাগারের বাইরে, তাদের জানা উচিৎ কী ঘটতে পারে ৷ এর জবাবে ভুট্রো বলেন, ‘ আমরা একটা দলের প্রস্তুত করা সংবিধান শুধু অনুমোদন করার জন্য ঢাকায় যেতে আর অপদস্ত হয়ে ফিরে আসতে পারি না যদি আমাদের কথা শোনা না হয় এবং আমাদের যুক্তিসঙ্গত প্রস্তাব বিবেচনা করা না হয়, তাহলে সেখানে যাওয়ার কারণ দেখি না ৷ এই ধরনের বাদানুবাদ উভয় পক্ষের আগুনে ঘি ঢেলেছিল ভুট্রোর দলের অবস্হানও কঠিন হয়ে উঠেছিল এবং সংহতি প্রদর্শন করতে ন্যাশনাল ও প্রভিন্সিয়াল অ্যাসেম্বলিতে নির্বাচিত পিপিপির সব সদস্য ভুট্রোর কাছে তাদের পদত্যাগপত্র পেশ করেছিলেন ৷
মুজিব ও তার দল আওয়ামী লীগ যখন ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি আহবানের ব্যাপারে উৎকন্ঠিত, তখন ভট্রো বেশি আগ্রহী ছিলেন নতুন সরকারে তার ও তার দলের অবস্হান কী হবে তা নিশ্চিত করার ব্যাপারে ৷ ছয় দফার বিস্তারিত আলোচনায় তিনি কম প্রবৃত্ত ছিলেন; বরং তিনি সেগুলো কিছু শর্তাধীনে গ্রহণ করতে প্রস্তুত ছিলেন ৷ মুজিবের ছয় দফা মেনে নেওয়ার বিনিময়ে ভুট্রো দাবী করেন, মুজিবের সরকারে দশজন ক্যাবিনেট মন্ত্রীর মধ্যে চারজন মন্ত্রী দিতে হবে তার দল পিপিপি থেকে ৷ সেই সঙ্গে তাকে (ভুট্রো) দিতে হবে উপ- প্রধান মন্ত্রীর পদ অথবা প্রেসিডেন্টের পদ ৷ ভুট্রোকে বিস্মিত ও অসন্তুষ্ট করে মুজিব স্পষ্ট জবাবে বলেছিলেন, ‘ মন্ত্রীসভা গঠিত হবে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের সিদ্ধান্তে- মন্ত্রণালয়ে তার পদের নিশ্চয়তা দেয়া যাবে না ৷ ‘ ভুট্রোকে মুজিব এ কথাও বলে দিলেন রাষ্ট্রপতির পদে একজনকে বেছে নেওয়া হয়ে গেছে ৷ ( ক্রমশ )
আশরাফুল আলম তাজ
লেখক কলামিস্ট
Leave a Reply