‘ ইতিহাসের স্মৃতি চিহ্নে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন ‘…… আশরাফুল আলম তাজ
( ধারাবাহিকঃ পাঁচ )
এ হেন বিষণ্ন অবস্হায় পশ্চিম পাকিস্তানে ভুট্রোর নিজের শহর লারকানায় যান ইয়াহিয়া ভুট্রোর সঙ্গে আলোচনা করতে ৷ এই বৈঠকের পর শেখ মুজিব ও তার দল আওয়ামী লীগ ভূৃুট্রোকে সামরিক জান্তার ‘ এজেন্ট ‘ হিসেবে আখ্যায়িত করেন ৷ মুজিব বুঝেছিলেন যে, ভুট্রো ন্যায়সঙ্গত ভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়াকে পরিহার করে একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সৃষ্টি করতে চলেছে ৷ মুজিব — ভুট্টোর মধ্যে ভারতের সঙ্গে ‘সম্পর্কের’ পরস্পর বিপরীত মনোভাবের নিয়ে বোঝাপড়ার আর একটি জটিল ফ্যাক্টর হয়ে দাড়িয়ে ছিল ৷ মুজিব ছিলেন ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্যপূর্ণ সম্পর্কের পক্ষে, অন্যদিকে ভূট্রোর ভারত বিরুদ্ধী বক্তব্য ভুট্রোকে পশ্চিম পাকিস্তানের অনেকের কাছেই প্রিয় করে তুলেছিল ৷
নির্বাচনের পর ১৯৭১ সালের জানুয়ারী মাসে ইয়াহিয়া ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, মুজিব হবেন পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধান মন্ত্রী ৷ অন্যান্য রাজনীতিকদের সঙ্গে পরামর্শ না করেই এই ঘোষণা দেওয়ায় ইয়াাহিয়ার কাছে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন ভুট্রো ৷ ইয়াহিয়া ভুট্রোকে জবাব দিয়ে বলেছিলেন , নির্বাচনে মুজিবের সংখ্যাগরিষ্ঠতাই তাকে প্রধানমন্ত্রীত্বের ম্যানডেট দিয়েছে ৷ ইয়াহিয়া ভুট্রোকে আরো বলেছিলেন, ভুট্রো ও পিপিপি এর স্বার্থেই মুজিবের সঙ্গে তার একটা বোঝাপড়া করা উচিত ৷ জবাবে ভুট্রো ইয়াহিয়াকে বলেন, ‘ মুজিব একজন চতুর বাস্টার্ড’ সে দ্রত ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি আহবান করতে চায় যাতে তার সংবিধান আর সরকারের অন্যান্য পরিকল্পনা কেউ বুঝতে না পাড়ে ৷, ভুট্রো আরো ঘোষণা করেন, ঢাকায় ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির মিটিং হবে একটা’ কসাইখানা’ ৷
মুজিবের অবস্হান উত্তরোত্তর বিরোধপূর্ণ হয়ে পড়েছিল ৷ ১৯৭১ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত নির্বাচন- পরবর্তী ভাষণগুলোয় কোনও ইঙ্গিত ছিল না যে তার ছয় দফায় কোনও প্রকার সমন্বয় করা হবে, অতচ ১৯৬৯ ও ১৯৭০ সালে ঢাকায় ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে তিনবার গোপন বৈঠকের সময় ছয় দফার চরম দিগগুলো পরিবর্তনের একটা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ৷ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অভূতপূর্ব সাফল্যের পর মুজিব ঘোষণা করেন যে, ছয় দফা পরিকল্পনা ছিল পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ( বাংলাদেশের) সম্পত্তি এবং এ বিষয়ে একচুলও আপস করা হবে না ৷
ভুট্রোর বক্তৃতাও ছিল আপসহীন ও উস্কানিমূলক ৷ এক বক্তৃতায় ভুট্রো ঘোষণা করেন, ‘ আমার দলের সহযোগিতা ছাড়া কোনও সংবিধান গৃহীত হবে না , কেন্দ্রে কোনও সরকারও পরিচালিত হতে পারবে না ৷’ নির্বাচনী ফলাফলে আওয়ামী লীগের এই বিপুল বিজয়ে বাঙালিদের একমাত্র নেতা হিসেবে মুজিবের উত্থান ঘটেছিল ৷ এই রকম তুলনাহীন বিজয়ের পর মুজিবকে কে চ্যালেঞ্জ করতে পারে? ভুট্রো নিজের শক্তি সম্পর্কে জানতেন৷ তিনি জয় করে নিয়েছিলেন পাকিস্তান সেনাাবাহিনীকে এবং রিক্রুটিং এরিয়ার অধিবাসীর ভোট
পরিস্হিতি জটিল করে তুলতে, ১৯৭১ সালের ৩০শে জানুয়ারি ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি বিমান ছিনতাই করে দুজন তরুণ কাশ্মিরী ‘ মুক্তিযোদ্ধা’ এবং বিমানটি লাহোরে ( পশ্চিম পাক্স্তানে) অবতরণ করতে বাধ্য করে ৷ বিমানটি শ্রীনগর থেকে জম্মুতে ( কাশ্মির) যাচ্ছিল ৷ ভুট্রো ছিনতাইকারীদের দেখতে যান, তাদের বীরত্বের প্রশংসা করেন এবং তাদের আশ্রয়ের অনুরোধ সমর্থন করেন৷ ভুট্রো ঘোষণা করেন, পৃথিবীর কোনও শক্তিই যে কাশ্মিরীদের সংগ্রাম থামাতে পারবে না এটা তারই জলন্ত নিদর্শন ৷ আরও ঘোষণা করেন, তার পিপিপি ছিনতাইকারীদের ও কাশ্মিরী ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্টকে সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা দেবে ৷ এর বিপরিতে গিয়ে শেখ মুজিব ছিনতাইয়ের ঘটনায় তীব্র ঘৃর্ণা প্রকাশ করেন এবং ‘ স্বার্থানেষী মহল যাতে এই পরিস্হিতি কাজে লাগিয়ে অনিষ্টিকর কিছু করতে না পারে সেজন্য ফলপ্রসু পদক্ষেপ নেওয়ার আহবান জানান সরকারের প্রতি ৷ মুজিব বলেন, এটা ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া নস্যাৎ করার একটা অপচেষ্টা ৷ ভারত প্রতিক্রিয়া হিসেবে তার ভূখন্ডের উপর সব পাকিস্তানী ফ্লাইট নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দেয় ছিনতাই ও এর পরিণতিতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা আরও টানটান হয়েছিল ৷ ( ক্রমশ )
Leave a Reply