ইতিহাস গবেষণাঃ বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের কিছু কথা……আশরাফুল আলম তাজ
(ধারাবাহিক: তিন)
১৯৭০ সালের নির্বাচনের মুখে পশ্চিম অংশে প্রধান রাজনৈতিক ও জননেতা হিসেবে আবির্ভূত হন ভুট্রো ৷; যাই হোক , তার সামনে একটা চলমান ইসু ছিল এক ইউনিট ৷ এক ইউনিট ছিল পাকিস্তান সরকারের একটা ভূূরাজনৈতিক কর্মসুচি, এটি চালু করা হয় ১৯৫৪ সালের নভেম্বরে ৷ পাকিস্তানের দুইটি অসমতাপূর্ণ অংশের প্রশাসনিক সমস্যার সমাধানে এই কর্মসূচি প্রণয়ন করা হয়েছ্ল ৷ এর পরিণতিতে পশ্চিম পাকিস্তানের চারটি প্রদেশ ( পাঞ্জাব,সিন্ধু, বালোচিস্তান, সীমান্ত প্রদেশ ) মিলে একটি প্রদেশে পরিণত হয় ৷ এক ইউনিট তখনও পর্যন্ত পাঞ্জাবীদের মধ্যে জনপ্রিয় ছিল , কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের ছোট প্রদেশগুলো এর বিরুদ্ধে ছিল ৷
ভারতের সঙ্গে সংঘাত, ভারতের সঙ্গে এক হাজার বছর যুদ্ধ এবং ১৯৬৬ সালে তাশখন্দ বৈঠকে আইয়ুবের কথিত জাতীয় স্বার্থ বিসর্জনের ব্যাপারে ভুট্রো জ্বালাময় বক্তৃতা দেন পাঞ্জাবে ৷ তবে ওই ধরনের আবেগপূর্ণ ইসুর তেমন কোনও আবেদন ছিল না বালোচিস্তানে অথবা সীমান্ত প্রদেশে বা ভুট্রোর নিজের প্রদেশ সিন্ধুতে ৷ নতুন জেগে ওঠা ভুখা-নাঙ্গা মানুষদের সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে ভুট্রো তার বক্তৃতায় ভূমি সংস্কার ও ইসলামী প্রজাতন্ত্রের কথা বলেছিলেন, বিশেষ করে শিল্র-শহরগুলোতে, এও লক্ষ্য রাখতে হয়েছিল যে বিশাল সম্পদের মালিক ও ব্যবসায়ীদের যেন বেশি দূরে ঠেলে দেয়া না হয় ৷
পাকিস্তানে ২৩ বছরের ইতিহাসে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, ১৯৭০ সালের ৭ই ডিসেম্বর ৷ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির জন্য প্রায় ৫৬ মিলিয়ন মানুষ শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল পরিবেশে ভোট দেন ৷ পূর্ব পাকিস্তান, সিন্ধু, বালোচিস্তান,পাঞ্জাব ও সীমান্ত প্রদেশের প্রদেশিক আইন পরিষদের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ৷ পশ্চিম পাকিস্তানে জুলফিকার আলী ভুট্রোর প্রচারণা আর পূর্ব পাকিস্তানে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রচেষ্টায় প্রতিদান মিলেছিল জাঁকাল ৷ দুজনেরই রাজনৈতিক প্রচারাভিযান বিপুলসংখ্যক নতুন সমর্থক ও অনুগামীর সমর্থন অর্জন করেছিল ৷ কেননা সামরিক শাসক আইয়ুব খান ও ইয়াহিয়া খানের অধীনে পাকিস্তান যেভাবে চলছিল তাতে তারা হতাশ ছিল ৷ নির্বাচকমন্ডলী সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এবং এই মর্মে পরিস্কার রায় দিয়েছিল যে এখন পরিবর্তনের সময় এসেছে ৷
পশ্চিম পাকিস্তানে জুলফিকার আলী ভুট্রোর পিপিপি সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পায়, কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানে শেখ মুজিবের আওয়ামী লীগ ও তাদের বিস্ময়কর জয়ের চেয়ে কম ৷ সাধারণ নির্বাচনে নজিরবিহীন বিজয় অর্জন করে দেশকে হতভম্ব করে দেয় আওয়ামী লীগ , ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দ ১৬২টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ পায় ১৬০ টি আসন , এবং প্রাদেশিক পরিষদের ৩০০চি আসনের মধ্যে ২৮৮টি ৷ এই ফলাফলে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে আওয়ামী লীগ এবং একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকারের অধীনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার অধিকারী হন শেখ মুজিবুর রহমান ৷ ( ক্রমশ)
Leave a Reply