ইতিহাস গবেষণাঃ বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের কিছু কথা – আশরাফুল আলম তাজ
(ধারাবাহিক – দুই)
পূর্ব পাকিস্তান থেকে শোধন করে যে সব খবর পাঠান হয়েছিল, তাতে এসব বৈদেশিক উদ্যোগ আর পাকিস্তানী সরকারের আপাতদৃষ্টিতে উদাসীনতার মধ্যে বৈপরীত্য ছিল ৷
বাঙালিরা এসব ঘটনার যথেষ্ট প্রমাণ পেয়েছিল ৷, যে দেশের পশ্চিম অংশের ভাইরা তাদের দুরবস্হা নিয়ে মাথা ঘামায় না, তাদের ভাল থাকার ব্যপারে তো প্রশ্নই নেই ৷ বাঙালিদের তিক্ততা এভাবে স্পষ্ট ঘৃণায় রূপান্তরিত হয়েছিল ৷
১৯৭০ সালের নভেম্বরে ও ডিসেম্বরে ঢাকার প্রেসিডেন্ট’স হাউজে তিনবার গোপন বৈঠক করেন মুজিব ৷ সেসব বৈঠকে মুজিব ভাবগম্ভীরভাবে প্রতিশ্রতি দেন, আলোচনা ও অনুমোদনের জন্য ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে উপস্হাপনার আগে খসড়া সংবিধান তিনি দেথাবেন ৷ জানা যায়, ইয়াহিয়াকে তিনি আশ্বস্ত করেছিলেন যে তার ছয় দফা কর্মসূচি দেশকে বিভক্ত করার অর্থ প্রকাশ করে না এবং ইয়াহিয়ার পাঁচ দফা অর্থাৎ এলএফও এবং তার নিজের ছয় দফা একত্রে মিলিত হবে ভবিষ্যৎ সংবিধানে ৷ G. W. চৌধরী বর্ণনা করেছেন ; ‘ ইয়াহিয়া-মুজিব তিনবার গোপন বৈঠকের কথোপথন রেকর্ড করা হয়েছিল, তাদের সংলাপের টেপ-রেকর্ডের ভার্সন আমি শুনেছি ৷ এই টেপ-রেকর্ডেড ভার্সন যে শুনবে সে কখনই ইয়াহিয়াকে দোষারোপ করতে পারবে না ৷৷যাই হোক, আওয়ামী লীগের বিশেষজ্ঞরা প্রাথমিকভাবে যে খসড়া সংবিধান প্রস্তুত করেছিলেন এবং তার একটা কপিও আমি পেয়েছিলাম, সেই সংবিধানে ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তানের বিন্দুমাত্র আশা ছিল না ৷ দেশ বিভাজনের কথা আনুষ্ঠানিতভাবে প্রস্তাব করা হয়নি বটে, কিন্তু খসড়ায় অন্তর্ভুক্ত ছিল ছয় দফা কর্মসূচির অনমনীয় ও সমন্বিত ব্যাখ্যা ৷ যদি ছয় দফা কর্মসূচি অন্তর্ভুক্ত হত, ফেডারেল ইউনিয়ন বলতে তাহলে আর কিছু থাকত না ‘
নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদের তুলনায় মুজিবের কাজ ছিল সরল ও সহজ ৷ তার একমাত্র ইশতেহার ছিল পশ্চিম পাকিস্তানীদের দ্বারা বাংলার শোষণ ; তার অঙ্গীকার ছিল একটা ‘ সোনার বাংলা ‘ উপহার দেওয়া৷ এটা ছিল দারিদ্র-পীড়িত ৭৫ মিলিয়ন মানুষের কাছে সর্বাধিক জনপ্রিয় আবেদন ৷ অবিভক্ত ভারতের মুসলিমরা যেমন বিশ্বাস করেছিল যে নিজেদের একটা পৃথক রাষ্ট্র তাদের সুযোগ-সুবিধা দেবে , পল্লী অঞ্চলের বাঙালিরাও ‘ সোনার বাংলা’র আইডিয়াটাকে ঠিক তেমনভাবেই বিবেচনা করেছ্ল, তাদের কাছে মুজিবের আবেদন ছিল বিস্ময়কর ৷ একমাত্র শর্ত ছিল , নির্বাচনে তাকে ও তার দলকে ভোট দিকে হবে ৷
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে মুজিবের প্রকাশ্য বিবৃতিগুলোতে ছিল মিশ্র বার্তা ৷ এক অনুষ্ঠানে তিনি বিবৃতি দেন, ‘পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের জন্য তিনি ক্যাম্পেইন করছেন, একই সঙ্গে তিনি ঘোষণা করেন যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া যদি ব্যাহত করা হয়, তাহলে তিনি তার জনগণকে স্বাধীনতার যুদ্ধে নেতৃত্ব দেবেন ‘ যাতে আমরা মুক্ত মানুষ হিসেবে বাঁচতে পারি ৷ অন্যদিকে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক জনসভায় প্রদত্ত ভাষণে মুজিব বলে” ‘ দেশের জনসংখ্যার বিবেচনায় সংখ্যাগুরু পূর্ব পাকিস্তান কেন বিচ্ছিন্ন হতে চাইবে ৷ বিচ্ছিন্ন হতে চাইলে তারা, ( পশ্চিম পাকিস্তানীরা) বিচ্ছিন্ন হোক ৷ ( ক্রমশ)
Leave a Reply