ইতিহাস গবেষণাঃ বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের
কিছু কথা……
—- আশরাফুল আলম তাজ
(ধারাবাহিক: এক)
১৯৭০ সালের ১৪ই আগস্ট – পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসে- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা বাংলাদেশ সৃষ্টি তুলে ধরে একটি নতুন মানচিত্র প্রদর্শন করে এবং সম্ভাব্য উদীয়মান দেশটির পতাকা নিয়ে মিছিল করে একটা মিটিংয়ে যায় যেটা আয়োজন করা হয়েছিল স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ৷ শুধু পাকিস্তানের ইন্টোলিজেন্স সার্ভিসগুলোই নয়, অন্য কয়েকটি দেশের ইন্টোলিজেন্স সার্ভিসও রিপোর্ট দিয়েছিল, ভারত থেকে টাকা ও অস্র পাঠান হচ্ছে পূর্ব পাকিস্তানে যাতে আওয়ামী লাগ নির্বাচনে সফল হতে পারে এবং পরিণাণস্বরূপ পাকিস্তান আর্মির সঙ্গে লড়াই করতে পারে ৷ আরও চক্রান্তের কথা তুলে ধরেন যোগাযোগ মন্ত্রী জি,ডাব্লিউ,চৌধরী, যিনি পূর্ব রাকিস্তান থেকে এসেছিলেন এবং যাবতীয় ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন;
১৯৭০ সালের এলএফও-এর অধীনে ইয়াহিয়ার ক্ষমতা পরিকল্পনা নিয়ে যখন মুজিবের দল বিতর্ক করেছিল; মুজিব তখন তার ঘনিষ্ঠ মন্ত্রীদের বলেছিলেন যে তার একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা ৷ ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের সঙ্গে মুজিবের এসব কথোপকথনের ট্রেপরেকর্ড দেওয়া হয়েছিল ইয়াহিয়াকে ৷ যেখানে মুজিবকে বলতে শোনা যায় ; ‘ আমার লক্ষ্য বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা ; নির্বাচন শেষ হওয়া মাত্রই আমি এলএফও (লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডার) ছিঁড়ে় টুররো টুতরো করে ফেলব ৷ নির্বাচন শেষ হয়ে গেলে কে আমাকে চ্যালেঞ্জ করবে? ‘ বাইরের উৎস থেকে সাহায্য পাওয়ার ইঙ্গিত দেন তার সহযোগীদের, ধারনা করা হয় তিনি ভারতের কথাই বলেছেন ৷ ইয়াহিয়া যখন তার ইন্টালিজেন্স বাজান এই পলিটিক্যাল মিউজিক শোনেন, তিনি হতভম্ব হয়ে যান ৷ মুজিবের কন্ঠস্বর এবং তার কথার সারাংস তিনি তক্ষুণি বুঝতে পেরেছিলেন ৷
ইয়াহিয়া ও মুজিবের পরিকল্পনা একাধিক ছিল বলেই প্রতীয়মান হয় ৷ যখন নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য এবং দেশের অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করার প্রস্তুতি চলছিল, পূর্ব পাকিস্তানে ঘটে যায় এক নজিরবিহীন প্রাকৃতিক বিপর্যয় ৷ ১৯৭০ সালের ১২ই নভেম্বর পূর্ব পাকিস্তানের উপকূলীয় জেলাগুলোয় আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড়, বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘন্টায় ১২০ মাইল , সৃষ্টি হয় ৩০ ফুটেরও বেশি উঁচু জলোচ্ছাস ৷ এই ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত হয় পাঁচটি জেলা ৷ সমকালীন ইতিহাসে এটাকে সবচেয়ে ভয়ানক প্রাকৃতিক বিপর্যয় বলে অভিহিত করা হয়েছিল ৷ এতে প্রাণহানি ঘটে, ২০০০০০ থেকে, ৫০০০০০ , সম্পদ ধ্বংস হয়ে যায় পুরোপুরি ৷ দূর্গতদের জন্য তাৎক্ষণিক সাহায্যের প্রয়োজন ছিল অত্যন্ত জরুরি ৷ বাঙালিরা ত্রাণের জন্য এমনকি পশ্চিম পাকিস্তানের দিকেও তাকিয়েছিল ৷ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান তখন চিন সফর করছিলেন, তিনি বিপর্যস্ত অঞ্চল পরিদর্শনে আসেন অর্ধসপ্তাহ পর ৷ ততদিনে আন্তর্জাতিক ত্রাণ সহায়তা চলছিল ভালভাবে ৷
পশ্চিম পাকিস্তানে গমের বাম্পার উৎপাদন হয়েছে, কিন্তু আমাদের কাছে খাদ্যশস্যের প্রথম চালান এসেছে বিদেশ থেকে…… মুর্দার কাফনের জন্যও এক গজ কাপড় দেয়নি ট্যেক্সটাইল মার্চেন্টরা ৷ আমাদের বিশাল সেনাবাহিনী আছে, কিন্তু আমাদের মৃতদের কবর দেওয়ার কাজ করতে হয়েছে ব্রিটিশ মেরিন সেনাদের ৷ প্রত্যেক গ্রাম, বাড়ি আর বসতিতে এখন উপলব্দি ছড়িয়ে পড়েছে…… আমাদের শাসনব্যবস্হা আমাদের হাতেই নিতে হবে ৷আমাদের অবশ্যই বস্তনিষ্ঠ সিদ্ধান্ত নিতে হবে ৷ পশ্চিম পাকিস্তানের আমলাতান্ত্রিক, পুঁজিবাদী আর সামন্ততান্ত্রিক স্বার্থের স্বৈরাচারী শাসনে আমরা আর ভুগতে চাই না ৷ ( ক্রমশ)
Leave a Reply