‘ ইতিহাসের স্মৃতি চিহ্নে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন — আশরাফুল আলম তাজ
( ধারাবাহিঃ সাত )
শেখ মুজিব ইতিমধ্যেই ভুট্রোর দাম্ভিকতায় অসন্তোষ ও বিক্ষুব্ধ হন ৷ তিনি বুঝতে পেরেছিলেন ভুট্রোর আলোচনার সমীকরণের মুল নিরিখ হচ্চে সরকারে ভুট্রোর নিজের ও তার দলের সদস্যদের পদপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা ৷ সাধারণ নির্বাচনের সামগ্রিক অগ্নিপরীক্ষা আর পরিণাম পূর্ব পাকিস্তানে মুজিবের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী বাড়িয়ে দিয়েছিল ৷ নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর মুজিবের রাজনৈতিক স্বায়ত্বশাসনের দাবি প্রগাঢ় হয়েছিল ৷ ওদিকে ভুট্রো, উৎসাহী হয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণের একমাত্র প্রতিনিধির ভুমিকা গ্রহন করার পর , স্বাধীনতার পথে পূর্ব পাকিস্তানের এগিয়ে যাওয়ার পথ রোধ করার কৌশল নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছিলেন ৷ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে ভুট্রোর সম্পর্ক প্রতিপক্ষের (মুজিবের) বিবেচনায় সন্তোষজনক ছিল ৷ জেনারেলরা মুজিবকে তার বিচ্ছিন্নতাবাদী ভাবভঙ্গির জন্য গভীরভাবে অবিশ্বাস করতেন ৷ সময় খরচ না করে ভুট্রো পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতিনিধির ভূমিকা গ্রহন করেন ৷ ভুট্রো ঢাকায় ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির মিটিংয়ের অনুমোদন দিতে সরাসরি অস্বীকার করেছিলেন যতক্ষণ না পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ সংবিধান ও ক্ষমতা কাঠামোর ব্যাপারে তার ও মুজিবের মধ্যে কোন চুক্তি চুড়ান্ত না হয় ৷ এই অচলাবস্হা থেকেই ইতিহাসে (পাকিস্তানের) পূর্ব পাকিস্তান থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের বিবর্তন ৷
১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ৩রা মার্চ ঢাকায় ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির অধিবেশন আহবান করেন ৷ সঙ্গে সঙ্গেই ক্ষুব্ধ হয়ে ভুট্রো বিদ্রোহের পতাকা উঁচুতে তুলে ধরেন এবং ঘোষণা করেন মুজিব ও তার মধ্যে ভবিষ্যৎ কনস্টিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলি নিয়ে সমঝোতা না হওয়া পর্যন্ত তারা অ্যাসেম্বলি অনুমোদন করবেন না ৷ তিনি খায়বার থেকে করাচি পর্যন্ত বিপ্লব ঘটানোর হুমকি দেন ৷ ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ নাগাদ ভুট্রো অন রেকর্ডে বলেন, ‘ আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনার আর জায়গা নেই , তিনি অসহযোগিতার পথ ধরেছেন ৷ ভুট্রো তার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে বলেন, ‘ আওয়ামী লীগ ছয় দফা কর্মসূচির ব্যাপারে অবস্হান পরিবর্তন না করা পর্যন্ত অধিবেশনে তিনি অংশগ্রহন করবেন না ৷৷ ভুট্রো আরও হুমকি দেন, ইয়াহিয়া খান যদি পরবর্তী সরকার ঘঠনের জন্য মুজিবকে আমন্ত্রণ জানান তাহলে তিনি তার বিরোধিতা করবেন এবং ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি বর্জন করবেন ৷ ভুট্রো কৌশল করে ‘সরকারে’ পিপিপির অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিতের জোর চেষ্টা অব্যাহত রাখেন ৷ আওয়ামী লীগ ও কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে চলমান রাজনৈতিক সংকটের ব্যাপারে প্রকাশ্য ঘোয়ণা দিয়েছিলেন ভুট্রো ৷ ভুট্রো ছিলেন বাকপটু ৷ কীভাবে শব্দ আর ইসু নিয়ে খেলা করতে হয় সেটা ভালই জানতেন ৷ ভুট্রো নিজ দল পিপিপির সদস্যদেরে হুমকি দিয়েছিলেন যে, পিপিপি’র দাবী মুজিব মেনে নেওয়ার আগে তার দলের কোন সদস্য যদি ঢাকায় অ্যসেম্বলি সেশনে যোগ দেওয়ার দুঃসাহস দেখালে তার ঠ্যাং ভেঙ্গে ফেলা হবে ৷ তিনি হুসিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, ওই রকম সদস্যদের পক্ষে ‘ ওয়ান-ওয়ে টিকিট কাটাই মঙ্গলজনক হবে ৷ (ক্রমশ)
Leave a Reply