মাজার দরবার ভাংচুরের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ বিশ্ব সূফী সংস্থার – আমাদের প্রতিনিধি
সুফিবাদ সৃষ্টির আদিমতম জ্ঞান৷ এটা একটা বাস্তব পদ্ধতিগত জ্ঞান। যেকারণে, সূফিবাদকে বিজ্ঞানও বলা হয়ে থাকে। নিজেকে পরিশুদ্ধ করত: চারিত্রিক উৎকর্ষ সাধন করে নিজের আত্মপরিচয় লাভ এবং স্রস্টার সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে তার পরিচয় লাভ করার পদ্ধতিগত শিক্ষাই সুফিবাদের মূল কথা।
অনাদিকাল ধরে নির্জনে নিরালায় ধ্যানের মাধ্যমে নবী রাসূল অলি আউলিয়া সাধকগন সুফিবাদের চর্চা করে আসছেন৷ হযরত মোহাম্মদ সা. ১৫ বছর জাবালে নূরের হেরা গুহায় ধ্যান সাধনার মাধ্যমে আল্লাহর পক্ষ থেকে বানী লাভ করেন৷
যুগে যুগে সাধনার মাধ্যেমে আত্মিক পরিশুদ্ধতা অর্জনকারী ব্যক্তিগন আল্লাহর নির্দেশে পাপী তাপী মানুষকে সুফিবাদের শিক্ষা দিয়ে আলোর পথ দেখিয়েছেন৷
শুদ্ধাত্মা মানুষেরা আদিমতম এ বিজ্ঞান, স্থান কাল ভেদে সময়োপযোগী করে সমসাময়িক মানুষের কাছে উপস্থাপন করেছেন৷ যেন মানুষ সহজে এ শিক্ষা হৃদয়ঙ্গম করতে সক্ষম হয়৷
শুদ্ধাত্মা এসকল মহা মানবগণ নবুয়তের যুগে নবী রাসুল আর বেলায়েতের যুগে সুফি সাধক, অলি আল্লাহ বলে পরিচিত৷ এ উপমহাদেশে নবী রাসুলদের মাধ্যমে নয় সুফি সাধকদের মাধ্যমে ইসলাম প্রচার ও প্রসার লাভ করেছে৷ সুফিদের জীবন পর্যালোচনা করলে দেখা যায় ও প্রত্যক্ষ প্রমান পাওয়া যায় তারা সুফিবাদের শিক্ষা দিয়েই মানুষের মাঝে আল্লহ ও রাসুলের প্রেম জাগরিত করেছিলেন৷
কালামুল্লাহতে আল্লাহর রঙ ধারণ করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
মানুষের চারিত্রিক দোষ-ত্রুটি দূর করে আল্লাহ রঙে রঙিন করা এবং আল্লাহর রাসূল (সা:) এর চরিত্রে চরিত্রবান করার মতো মহৎ কাজটি কোনোকালেই মসৃন ছিলোনা৷ সুফিদের ইতিহাস প্রেম ভক্তি ভালোবাসার হলেও অত্যাচার, নির্যাতন যেন তাদের নিত্য সঙ্গী। সুফিদের হাজার হাজার বিছরের ইতিহাস তা ই বলে৷
সুফিগন হাসিমুখে এসব অত্যাচার মিথ্যাচার অপপ্রচার সহ্য করে মানুষকে আলোকিত করা তথা শান্তির সমাজ গঠনের কাজ করে যান৷
কোনো অঞ্চলে সুফিদের উপস্থিতি বুঝা যায় ওই অঞ্চলের ধর্মীয় রীতিনীতি পুরনো মসজিদের পাশে মাজারের অবস্থান দেখে৷ ঐতিহ্যগতভাবে শত শত বছর ধরে এ উপমহাদেশে মাজার ও মাজার কেন্দ্রীক নানা ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের প্রচলন রয়েছে।
আপামর জনসাধারণ এসকল অনুষ্ঠানে ভক্তি ও শ্রদ্ধা নিয়ে যোগদান করেন৷ শান্তি প্রিয় সুন্দর অহিংস আলোকিত চরিত্রের অধিকারী সুফি সাধকদের মাজারে ভক্তি ও শ্রদ্ধা প্রদর্শনের ইতিহাস স্মরণাতীত কাল থেকেই আবহমান।
সম্প্রতি বাংলাদেশে একটি গোষ্ঠী ধর্মের নামে নানা অযুহাতে একের পর এক মাজার ভাঙা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, হত্যাকান্ড ঘটিয়ে চলেছে। শত শত বছর ধরে হতে থাকা মাজার কেন্দ্রীক ওরস, মিলাদ মাহফিল, সামা কাওয়ালীর অনুষ্ঠান পন্ড করছে৷ মাজারের দান বাক্স এবং অন্যান্য সম্পদ লুটপাট করছে। গবাদী পশুও রেহাই পাচ্ছেনা এইসকল সমাজ ও আইন বিরোধী, অশান্তি ও হাংগামা সৃষ্টিকারী লুটেরাদের হাত থেকে। যে সকল সুফি সাধক এ দেশে ইসলামের দাওয়াত নিয়ে এসেছেন তাদের মাজারের হামলা হচ্ছে৷ এমনকি সুফিবাদীদের বাড়ি বাড়ি হামলা, ভাংচুর, লুটপাট হচ্ছে৷
মানুষকে সত্যিকারের মানবিক চরিত্রবান মানুষে রুপান্তরিত করতে সুফিবাদ চর্চার যে অবদান তা অস্বীকার করার সাধ্য কারো নেই তবুও এ মহান শিক্ষা ও আদর্শকে মুছে ফেলার এ প্রচেষ্টাকে নস্যাৎ করে দিতে, সুফিবাদের শিক্ষা মানুষের দোরগোড়ায় পৌছে দিতে, বিশ্বের সুফিদের অভিন্ন প্লাটফর্ম গ্লোবাল সুফি অর্গানাইজেশন এর যাত্রা শুরু হয়েছে৷
সূফী সাধকদের উপর অত্যাচার, রওজা মাজার দরবার ভাংচুর, ধর্মীয় স্থাপনায় অগ্নি সংযোগ, লুটপাট, হত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে বিশ্ব সূফী সংস্থা। একই সাথে আইন ও সমাজ বিরোধী এই সকল হিংস্র বর্বরতার বিরুদ্ধে দেশের আপামর বিবেকবান শান্তিপ্রিয় দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ ও জাগ্রত হবার আহবান জানাচ্ছে বিশ্ব সুফি সংস্থা।
Leave a Reply